অচলাবস্থা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
সরকার কারফিউ শিথিল করে সীমিত পর্যায়ে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখলেও শিক্ষার কথা কেউ ভাবছেন বলে মনে হয় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কোনো উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যে বাধ্যতামূলক পেনশন স্কিম প্রত্যয় বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, সেটা এখনো অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে। সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। নজিরবিহীনভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সরকার শেষ পর্যন্ত কারফিউ জারি করে।
আন্দোলনের কারণে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা কয়েকবার স্থগিত করতে হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার কারণেও সিলেট অঞ্চলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। সর্বশেষ খবর হলো, ২৮ জুলাই থেকে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে দুই দফায় চার দিনের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। প্রথমে ১৯ জুলাই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁদের অভিভাবকেরাও উদ্বেগে আছেন। এইচএসসি পরীক্ষা দেরিতে হলে ফল প্রকাশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও বিলম্বিত হবে। করোনার ধকল এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
এ মুহূর্তে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা বন্ধ আছে। যেখানে এক দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতির সম্মুখীন হয়, সেখানে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার ক্ষতিটা সহজেই অনুমান করা যায়। করোনা মহামারি ছাড়া সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এত দিন বন্ধ থাকার নজির নেই।
এভাবে দিনের পর দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে দেশ কেবল মেধাশূন্যই হবে না, শিক্ষাশূন্য হয়ে যাবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যদি সে রকম অবস্থা না চান, তাহলে অবিলম্বে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের মন্ত্রীদের বক্তৃতা–বিবৃতি দেখলে মনে হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে। এইচএসসি পরীক্ষা ফের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথাও বলছেন। কিন্তু যাঁরা প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলন করে এলেন, তাঁদের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করলেন না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেই শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকার যখন মনে করছে শিক্ষার্থীদের মূল দাবি পূরণ হয়ে গেছে; তখন তাঁদের সঙ্গে বসে বাকিগুলোর বিষয়ে একটা সমঝোতায় আসতে অসুবিধা কোথায়? কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা এখনো ভয়ভীতির মধ্যে আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে গয়রহ মামলা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন তথা দেশে স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না। সরকারকে মনে রাখতে হবে, অর্থনীতির ক্ষতি হয়তো টাকা দিয়ে পোষানো যায়, কিন্তু শিক্ষার ক্ষতি কোনোভাবে পোষানো যায় না। সরকার যত দেরি করবে, শিক্ষার ক্ষতি তত বাড়তে থাকবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor
কমেন্ট বক্স